“বৈশাখ মানেই বাংলা নববর্ষ। বাংলা
নববর্ষের প্রথম মাস। এর মধ্যে দিয়েই শুরু হয়ে গেল আরেকটি নতুন বছর। এই মাস দিয়ে
সূচিত হল আগামী একটি বছরের যাত্রা। অতীত হয়ে গেল পিছনের সব কিছু। চৈত্রের শেষ সূর্য
ডোবার সাথে সাথে শেষ হয়ে গেছে আরেকটি বছর। নতুন একটি বছরের দিকে চেয়ে আমাদের আশা
আকাঙ্ক্ষা আর চাওয়া পাওয়ার প্রত্যাশা নিয়ে দিন চলা শুরু হল নতুন করে। আরেকটি
সূর্যের উদয়ের মধ্যে দিয়ে নতুন একটি বছরের আগমন ঘটল। আমরা এই নতুন বছরটির শুভ
প্রত্যাশা কামনা করি। এই বছরের মধ্যে প্রকৃতির সব রূপ বৈচিত্র্যই থাকবে। থাকবে
ভাঙ্গা গড়ার খেলা। থাকবে আনন্দ হাসি আর সুখ-দুখের স্বপ্ন। প্রত্যেকেই নিজের মতো
করে বরণ করে নেবে এই মাসকে। এই জন্যই বৈশাখের এতো কদর। তার প্রতি সবার এতো আগ্রহ।
আশা-প্রত্যাশার মধ্যে দিয়ে তাকে বরণ করা হয়।
নববর্ষ আসে ঘরে ঘরে। নববর্ষ আসে
হৃদয়ে হৃদয়ে। আর হৃদয় আনে ভালোবাসার বারতা। পুরানো সব কিছুকে বাদ দিয়ে নতুনের জয়ে
ধ্বনির মধ্যে দিয়ে আসে বৈশাখ। কর্দমাক্ত সব ধুয়ে মুছে নতুন করে শুরু হয়
পরিচ্ছন্নতার। মানুষ নতুন উদ্যোমে যেন শুরু করতে চায় তার জীবনযাপন।
ঐ দিন সেজেগুজে, বৈশাখি পোশাকে
স্বাগত জানানো হয় নববর্ষকে। প্রচন্ড গরম উপেক্ষা করেই মানুষের ঢল নামে উৎসবের জন্য। সবাই সুন্দর
একটি ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা করে। বৈশাখ
আমাদের অনেক প্রত্যাশার। অনেক আশার বাণী শোনা যাবে তার কাছে। আমরা বৈশাখকে স্বাগত
জানাই; স্বাগত জানাই নববর্ষকে। শুভ নববর্ষ ১৪২১।”
বাংলা নববর্ষ বাংলাদেশের সকল মানুষের
তথা বাঙালি জাতির জন্য একটি ঐতিহ্যবাহী উৎসবের দিন। নববর্ষ মানে নতুন করে আর একটি বছরের যাত্রা শুরু, যেন নতুন করে
সুন্দরের দিকে এগিয়ে চলা। ‘‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো’’ এ সঙ্গীতানুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে
বাঙালী জাতি নববর্ষের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করে। এটা যে শুধু একটি উৎসব তা কিন্তু নয়।
বাংলা সন আমাদের জাতীয় সন। রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক ক্ষেত্রে ইংরেজি সাল প্রচলিত হলেও
বাংলাদেশের বৃহত্তর গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে নিত্যকর্মে বাংলা সনের বহুল প্রচলন
রয়েছে। কৃষিকর্ম, সরকারি খাজনা (ভূমি
রাজস্ব), মহাজনী ও ব্যবসায়িক লেনদেন সবই বাংলা তারিখে।
স্বাধীনতা প্রাপ্তির পর সরকারি কাজকর্মের মাঝে ইংরেজি সালের পাশাপাশি বাংলা
সন-তারিখ লেখার জন্য ১৯৮৭ সালের ১জানুয়ারি নির্দেশ জারি করে সরকার। ফলে বাংলা একাডেমীর
১৯৬৬ সালের পঞ্জিকা অনুযায়ী সব সরকারি মন্ত্রণালয়, বিভাগ,
পরিদফতর ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলোয় এ নির্দেশ পালিত হয়ে থাকে।
বৈশাখী মেলা বাঙালী জাতির সার্বজনীন
উৎসব। দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ২০০ বৈশাখী মেলা প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয়। কোথাও কোথাও
এক দিন আবার কোথাও এক সপ্তাহ এ মেলা অত্যন্ত আনন্দঘন পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম
এলাকার প্রধান তিনটি ক্ষুদ্র জাতিসত্তা রয়েছে। যাদের প্রত্যেকেরই নতুন বছরের নতুন
দিনে উৎসব আছে। ত্রিপুরাদের বৈশুখ, মারমাদের সাংগ্রাই ও চাকমাদের বিজু উৎসব।
বর্তমানে এই তিনটি জাতিসত্তা একত্রে পয়লা বৈশাখে যৌথভাবে বৈশাবি উৎসব পালন করে।
বর্তমানে প্রচলিত বিভিন্ন আঞ্চলিক
অনুষ্ঠানের মধ্যে চট্টগ্রামের জববারের বলীখেলা, রাজশাহীর গম্ভীরা প্রবল উৎসাহ-উদ্দীপনায়
অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পয়লা বৈশাখকে কেন্দ্র করে লোকগায়কের
উপস্থিতি থাকে। তারা যাত্রা, পালাগান, জারিগান, গম্ভীরা, গাজীর
গান, আলকাপ গানহ বিভিন্ন ধরনের লোকসঙ্গীত, বাউল, মারফতি, মুর্শিদি,
ভাটিয়ালী ইত্যাদি আঞ্চলিক গান পরিবেশন করেন। কোথাও কোথাও
চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, নাটক, পুতুল
নাচ, লাঠি খেলা, সাপ খেলা,
নাগরদোলা, হাডুডু, চড়কি খেলা, যাত্রা পালা, সার্কাস ইত্যাদি
মেলার বিশেষ আকর্ষণ। এছাড়া শিশুদের জন্য থাকে বায়োস্কোপ। মূলত এসব অনুষ্ঠান এখনো
কম-বেশি সারা দেশে আনন্দঘন লোকায়িত সংস্কৃতির ধারক হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
১৪ এপ্রিল ২০১৪ বাংলাদেশসহ পৃথিবী
ব্যাপী বাংলা ভাষাভাষি সকলে উদযাপন করছে “১লা বৈশাখ- বাংলা নববর্ষ”। এ উপলক্ষ্যে
চীন আন্তর্জাতিক বেতার (সিআরআই) বাংলা বিভাগের সকল শ্রোতা বন্ধুদের বাংলা নববর্ষের
শুভেচ্ছা।
বাংলা নববর্ষ আসে আনন্দের পসরা নিয়ে।
অতীতকে ভোলাতে আর ভবিষ্যতের সম্ভাবনায় আশান্বিত হতে। বাংলাদেশ জেগে উঠুক সম্ভাবনার
রাঙা আলোয়। তাই আমরা বৈশাখকে স্বাগত জানাই; স্বাগত জানাই বাংলা নববর্ষকে। শুভ নববর্ষ
১৪২১। আপনার সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন।
দিদারুল ইকবাল
বাংলাদেশ মনিটর
চীন আন্তর্জাতিক বেতার
ঢাকা, বাংলাদেশ।