'নয়া চীন প্রতিষ্ঠার ৬০তম বার্ষিকী'
বিশ্বব্যাপী জ্ঞান যাচাই প্রতিযোগিতা- ২০০৯
দিদারুল ইকবাল, সি.আর.আই-সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাব ।। চীন আন্তর্জাতিক বেতার বাংলা বিভাগ থেকে প্রতি বছর চীনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিবস উপলক্ষ্যে নানান ধরনের জ্ঞান যাচাই মূলক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়ে থাকে। ২০০৯ সালের ১লা অক্টোবর চীন গণপ্রজাতন্ত্রের ৬০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। ৬০ বছরে চীন সরকার ও জনগণ দেশ গঠনকাজে প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে। চীনের সার্বিক জাতীয় শক্তির অনেক উন্নত হয়েছে। জনগণের জীবনযাপনের মান ধাপে ধাপে সমৃদ্ধ হয়েছে। শিল্প, কৃষি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিসহ নানা ক্ষেত্রে ব্যাপক সাফল্য অর্জিত হয়েছে। বিভিন্ন দেশের শ্রোতা ও নেট-ব্যবহারকারীকে নয়া চীন প্রতিষ্ঠার ৬০ বছরের পরিবর্তন ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অর্জিত সাফল্যের ওপর মোটামুটি ধারণা দেয়ার জন্য চীন আন্তর্জাতিক বেতার ১ জুন থেকে বেতার অনুষ্ঠান ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে 'নয়া চীন প্রতিষ্ঠার ৬০তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী জ্ঞান যাচাই প্রতিযোগিতা' আয়োজন করা হয়েছে। প্রতিযোগিতাটি ০১ জুন থেকে ০১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলতে থাকবে। সি.আর.আই-সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাব তার ওয়েবসাইট এবং নিজস্ব প্রকাশনা “ডিএক্সীং নিউজ” পত্রিকার মাধ্যমে এছাড়া অন্য একটি পত্রিকা “বিশ্ব বন্ধন” এর মাধ্যমে বাংলাদেশের তৃণমূল পর্যায়ের সর্বস্তরের বেতার শ্রোতাদের প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ নিশ্চিত করতে প্রতিযোগিতার প্রশ্ন গুলি প্রকাশ করার ব্যবস্থা নিয়েছে। এছাড়া অংশগ্রহণকারীদের উত্তরপত্র সরাসরি চীন অআন্তর্জাতিক বেতারে পাঠানোরও ব্যবস্থা নিয়েছে। যারা এই প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করতে আগ্রহী তারা ফরমটি পূরণ করে নিচের ঠিকানায় অবশ্যই আগষ্ট মাসের ২২ তারিখের মধ্যে পাঠাতে হবে। এছাড়া যারা ই মেইলে উত্তর পাঠাতে ইচ্ছুক তারা আগষ্ট মাসের ৩০ তারিখের মধ্যে পাঠাতে পারেন এই ঠিকানায় southasiaradioclub@yahoo.com, sarc.dxing@gmail.com, ben@cri.com.cn । উল্লেখিত ১০টি প্রশ্নের উত্তর আপনি নিয়মিত চীন আন্তর্জাতিক বেতার বাংলা বিভাগ এর অনুষ্ঠান শুনলে জানতে পারবেন কিংবা ওয়েবসাইট লগইন করলেও। ওয়েবসাইটের ঠিকানা- http://www.bengali.cri.cn/ । 'নয়া চীন প্রতিষ্ঠার ৬০তম বার্ষিকী’ উপলক্ষ্যে বেতারে একটি ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রচার করা হচ্ছে পাশাপাশি ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হচ্ছে যাতে ১০টি প্রশ্নের উত্তর রয়েছে। অনুষ্ঠান প্রতিদিন বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যে ০৮টা থেকে ০৯টা, ০৯টা থেকে ১০টা এবং ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত শর্ট ওয়েভ ৯৪৯০, ৯৬০০, ১১৬১০ কিলোহার্জে প্রচার করা হচ্ছে এবং পরদিন সকাল ০৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত ৯৬৫৫, ১১৬৪০ কিলোহার্জে পূন:প্রচার করা হচ্ছে। এছাড়া যাদের ইন্টানেট ব্যবহারের সুবিধা রয়েছে তারা অনেক সহজেই সি.আর.আই-সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাব এর http://www.cri-sarc.blogspot.com%20এবং%20http://www.sarc97.blogspot.com/ এই ওয়েবসাইট থেকে সঠিক উত্তর সংগ্রহ করতে পারবেন, কারণ এখানে প্রকাশিত প্রতিবেদনের মধ্যে উত্তরগুলি হাইলাইট মার্কিং করে রাখা হয়েছে। যাদের ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা নেই তারা ইচ্ছে করলে নিচের মোবাইল নম্বরে ফোন করেও সঠিক উত্তরটি জেনে নিতে পারেন, মোবাইল নম্বরটি হচ্ছে- ০১৭১১-০৫৪৯৮৫, ০১৮১৪-২৭৮৩৪৩। যারা এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবেন তারা অনুগ্রহ করে নাম ও ঠিকানা পরিস্কার ভাবে লিখবেন। হাতের লেখা, ফটোকিপ গ্রহণযোগ্য। আমাদের বিশ্বাস, আপনাদের আন্তরিক অংশগ্রহণে প্রতিযোগিতাটি প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে।
উত্তরপত্র পাঠাবার ঠিকানা:
দিদারুল ইকবাল
মনিটর- চীন আন্তর্জাতিক বেতার
বাংলা বিভাগ,
সি.আর.আই-সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাব,
বাড়ী- ৩৩৬, সেকশন- ৭, রোড- ২,
মিরপুর, ঢাকা- ১২১৬, বাংলাদেশ।
প্রতিযোগিতার সময়সীমা: ২০০৯ সালের ১ জুন থেকে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
প্রতিযোগিতার নিয়ম: প্রতিযোগিতায় অনলাইন প্রশ্ন ও 'চীনকে শুভেচ্ছা জানানো' এ দু'টি অংশ অন্তর্ভুক্ত থাকবে। অনলাইন প্রশ্ন অংশে ১০টি প্রশ্ন থাকবে। সব প্রশ্নের সঠিক উত্তর এবং শুভেচ্ছা মন্তব্য লেখার বন্ধুরা পুরস্কার অর্জনের সুযোগ পাবে।
পুরস্কার:
বিশেষ পুরস্কার: এবারের প্রতিযোগিতায় ১০ জন বিশেষ পুরস্কার বিজয়ী নির্বাচিত হবে। তাঁরা বিনা খরচে চীন ভ্রমণের সুযোগ পাবেন।
প্রথম পুরস্কার: চীনের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ রেশমী ছবি
দ্বিতীয় পুরস্কার: চীনের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ হাতে আঁকা রেশমী স্কার্ফ বা সাজসজ্জার কাপড়
তৃতীয় পুরস্কার: স্পোর্টস শার্ট
বিজয়ীদের নামের তালিকা সিআরআই অনলাইন ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে।
প্রতিযোগিতার প্রশ্নসমূহ:
এক. চীন বিশ্বের কত শতাংশ আবাদী জমি দিয়ে বিশ্বের ২২ শতাংশ মানুষ লালনপালন করে?
ক. ৭% খ. ৮% গ. ৯% ঘ. ১০%
দুই. ২০০৮ সালে চীনের খাদ্যশস্যের উত্পাদনের পরিমাণ কত?
ক. ৩০ কোটি টনখ. ৪০ কোটি টন গ. ৫০ কোটি টন ঘ. ৬০ কোটি টন
তিন. চীন প্রথম সংবিধানের জন্য জনগণের কতটি মতামত সংগ্রহ করে?
ক. ৫ লাখ খ. ১০ লাখ গ. ১৩.৮ লাখ ঘ. ১৭.৮ লাখ
চার. বর্তমানে চীনের কার্যকর আইন ক’টি?
ক. ১২৯ খ. ২১৯ গ. ২২৮ ঘ. ২৩১
পাঁচ. বর্তমানে বিশ্বে চীনের অর্থনৈতিক অবস্থান কত?
ক. দ্বিতীয় খ. তৃতীয় গ. চতুর্থ ঘ. পঞ্চম
ছয়. ২০১০ সালে বিশ্ব মেলা চীনের কোন শহরে অনুষ্ঠিত হবে?
ক. পেইচিং খ. শাংহাই গ. কুয়াংচৌ ঘ. হংকং
সাত. কোন সালে জাতিসংঘে চীন গণ প্রজাতন্ত্রের বৈধ আসন পুনরুদ্ধার করে?
ক. ১৯৭১ সালের অক্টোবর খ. ১৯৭২ সালের জানুয়ারী
গ. ১৯৪৯ সালের অক্টোবর ঘ. ১৯৮১ সালের অক্টোবর
আট. বর্তমানে কতটি দেশের সঙ্গে চীনের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা হয়েছে?
ক. ১২১ খ. ১৫৩ গ. ১৭১ ঘ. ১৮৫
নয়. প্রথমে মহাকাশে অবতরনকারী চীনা ব্যক্তির নাম কি?
ক. ইয়াং লি ওয়েই খ. নিয়ে হাই শাং গ. চাই চি কাং ঘ. লিউ বো মিং
দশ. চীনের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ কোন সালে উতক্ষেপন করা হয়?
ক. ১৯৭০ খ. ১৯৭১ গ. ১৯৭৫ ঘ. ১৯৮০
আপনার শুভেচ্ছা ও মন্তব্য লিখুন।
উত্তরপত্র পাঠাবার ঠিকানা:
দিদারুল ইকবাল
মনিটর- চীন আন্তর্জাতিক বেতার
বাংলা বিভাগ,
সি.আর.আই-সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাব,
বাড়ী- ৩৩৬, সেকশন- ৭, রোড- ২,
মিরপুর, ঢাকা- ১২১৬, বাংলাদেশ।
প্রতিযোগিতার সময়সীমা: ২০০৯ সালের ১ জুন থেকে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
প্রতিযোগিতার নিয়ম: প্রতিযোগিতায় অনলাইন প্রশ্ন ও 'চীনকে শুভেচ্ছা জানানো' এ দু'টি অংশ অন্তর্ভুক্ত থাকবে। অনলাইন প্রশ্ন অংশে ১০টি প্রশ্ন থাকবে। সব প্রশ্নের সঠিক উত্তর এবং শুভেচ্ছা মন্তব্য লেখার বন্ধুরা পুরস্কার অর্জনের সুযোগ পাবে।
পুরস্কার:
বিশেষ পুরস্কার: এবারের প্রতিযোগিতায় ১০ জন বিশেষ পুরস্কার বিজয়ী নির্বাচিত হবে। তাঁরা বিনা খরচে চীন ভ্রমণের সুযোগ পাবেন।
প্রথম পুরস্কার: চীনের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ রেশমী ছবি
দ্বিতীয় পুরস্কার: চীনের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ হাতে আঁকা রেশমী স্কার্ফ বা সাজসজ্জার কাপড়
তৃতীয় পুরস্কার: স্পোর্টস শার্ট
বিজয়ীদের নামের তালিকা সিআরআই অনলাইন ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে।
প্রতিযোগিতার প্রশ্নসমূহ:
এক. চীন বিশ্বের কত শতাংশ আবাদী জমি দিয়ে বিশ্বের ২২ শতাংশ মানুষ লালনপালন করে?
ক. ৭% খ. ৮% গ. ৯% ঘ. ১০%
দুই. ২০০৮ সালে চীনের খাদ্যশস্যের উত্পাদনের পরিমাণ কত?
ক. ৩০ কোটি টনখ. ৪০ কোটি টন গ. ৫০ কোটি টন ঘ. ৬০ কোটি টন
তিন. চীন প্রথম সংবিধানের জন্য জনগণের কতটি মতামত সংগ্রহ করে?
ক. ৫ লাখ খ. ১০ লাখ গ. ১৩.৮ লাখ ঘ. ১৭.৮ লাখ
চার. বর্তমানে চীনের কার্যকর আইন ক’টি?
ক. ১২৯ খ. ২১৯ গ. ২২৮ ঘ. ২৩১
পাঁচ. বর্তমানে বিশ্বে চীনের অর্থনৈতিক অবস্থান কত?
ক. দ্বিতীয় খ. তৃতীয় গ. চতুর্থ ঘ. পঞ্চম
ছয়. ২০১০ সালে বিশ্ব মেলা চীনের কোন শহরে অনুষ্ঠিত হবে?
ক. পেইচিং খ. শাংহাই গ. কুয়াংচৌ ঘ. হংকং
সাত. কোন সালে জাতিসংঘে চীন গণ প্রজাতন্ত্রের বৈধ আসন পুনরুদ্ধার করে?
ক. ১৯৭১ সালের অক্টোবর খ. ১৯৭২ সালের জানুয়ারী
গ. ১৯৪৯ সালের অক্টোবর ঘ. ১৯৮১ সালের অক্টোবর
আট. বর্তমানে কতটি দেশের সঙ্গে চীনের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা হয়েছে?
ক. ১২১ খ. ১৫৩ গ. ১৭১ ঘ. ১৮৫
নয়. প্রথমে মহাকাশে অবতরনকারী চীনা ব্যক্তির নাম কি?
ক. ইয়াং লি ওয়েই খ. নিয়ে হাই শাং গ. চাই চি কাং ঘ. লিউ বো মিং
দশ. চীনের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ কোন সালে উতক্ষেপন করা হয়?
ক. ১৯৭০ খ. ১৯৭১ গ. ১৯৭৫ ঘ. ১৯৮০
আপনার শুভেচ্ছা ও মন্তব্য লিখুন।
.............................................................................................................................................
.............................................................................................................................................
৪. নাম :..................................................................................................................................
৭. ই-মেইল :..............................................................................................................................
৬. নাগরিকত্ব :...........................................................................................................................
৯. পেশা :..................................................................................................................................
৮. ঠিকানা :..............................................................................................................................
৫. বয়স :.................................................................................................................................
প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কিত ওয়েবপেইজ
নয়া চীনের ৬০ বছরের জাতীয় শক্তির উন্নয়ন
(১ম পর্ব) ০১/০৬/২০০৯ ১৯:০৮:১৮
নয়া চীন প্রতিষ্ঠার ৬০ বছরে অর্জিত কূটনৈতিক সাফল্য
(২য় পর্ব) ০১/০৬/২০০৯ ১৯:০৮:১৮
নয়া চীন প্রতিষ্ঠার ৬০ বছরে কৃষি ক্ষেত্রের সাফল্য
(৩য় পর্ব) ০৮/০৬/২০০৯ ১৮:২৪:১০
নয়া চীনের ৬০ বছরে আইন গঠনের সাফল্য
(৪র্থ পর্ব) ০৯/০৬/২০০৯ ২০:৪১:২৩
নয়া চীনের ৬০ বছরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রের সাফল্য
(শেষ পর্ব) ০৬/০৭/২০০৯ ২৩:১৫:১৯
(১ম পর্ব) ০১/০৬/২০০৯ ১৯:০৮:১৮
নয়া চীন প্রতিষ্ঠার ৬০ বছরে অর্জিত কূটনৈতিক সাফল্য
(২য় পর্ব) ০১/০৬/২০০৯ ১৯:০৮:১৮
নয়া চীন প্রতিষ্ঠার ৬০ বছরে কৃষি ক্ষেত্রের সাফল্য
(৩য় পর্ব) ০৮/০৬/২০০৯ ১৮:২৪:১০
নয়া চীনের ৬০ বছরে আইন গঠনের সাফল্য
(৪র্থ পর্ব) ০৯/০৬/২০০৯ ২০:৪১:২৩
নয়া চীনের ৬০ বছরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রের সাফল্য
(শেষ পর্ব) ০৬/০৭/২০০৯ ২৩:১৫:১৯
নয়া চীনের ৬০ বছরের জাতীয় শক্তির উন্নয়ন (১ম অংশ)
2009-06-01 19:08:18
২০০৮ সালের ৮ আগস্ট ২৯তম অলিম্পিক গেমস চীনের রাজধানী পেইচিংয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২০৪টি দেশ ও অঞ্চল থেকে আসা খেলোয়াড়রা সম্মিলিত হয়েছেন এবং বিশ্বের কয়েকশ' কোটি লোক একসাথে ক্রীড়ার সৃষ্ট আনন্দ উপভোগ করেছেন।১৬ দিন পর অলিম্পিক গেমসের পবিত্র অগ্নি মশাল প্রধান স্টেডিয়াম – বার্ড নেস্টে নিভেছে। পেইচিং অলিম্পিক গেমস সাফল্যের সঙ্গে শেষ হয়েছে। সমাপনি অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির চেয়ারম্যান জ্যাক রগে এবারের অলিম্পিক গেমসের ভূয়ষী প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেছেন, 'এবারের অলিম্পিক গেমসের মাধ্যমে বিশ্ব চীনকে আরো বেশি জেনেছে। চীনও বিশ্বকে আরো বেশি বুঝেছে। এবার হচ্ছে একটি সত্যিকার অতুলনীয় অলিম্পিক গেমস।'এ ১৬ দিন ১৩০ কোটি চীনাদের কাছে চিরস্মরনীয় দিন। অলিম্পিক গেমস আয়োজন করার কিছু নির্দিষ্ট পরিবেশ দরকার। পেইচিং অলিম্পিক গেমসের স্টেডিয়াম নির্মাণ, বুনিয়াদী ব্যবস্থার সংস্কারসহ নানা ক্ষেত্রে চীন ৩১০ বিলিয়ন ইউয়ান রেনমিনপি ব্যয় করেছে। অতীতে অলিম্পিক গেমসের জন্য চীনের এ পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা মোটেই সম্ভব ছিল না।১৯৪৯ সালে নয়া চীন প্রতিষ্ঠার সময় দীর্ঘদিন যুদ্ধের কারণে অর্থনীতি প্রায় ধ্বংসের অবস্থা। তখন মাথাপিছু জি.ডি.পি ছিল কেবল ৫০ মার্কিন ডলার। এখন ৭৭ বছর বয়সী বৃদ্ধা লিউ কুই সিয়ান শুধুমাত্র 'গরীব' এ কথা বলে তাঁর তত্কালীণ জীবনের বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, 'তখন খুব গরীব। আমার সন্তান বেশি, আয় কম। এক বেলা ভাত খেলে জানতাম না পরের বেলার ভাত কোথায়। শীতকালে হাড়কাঁপানো শীত সহ্য করা যায় না। পরিবারের সাত জন সদস্যের কেবল দু'টি লেপ ছিল।'নয়া চীন প্রতিষ্ঠার প্রথম দিকে চীনারা শিল্পায়নের আদর্শ নিয়ে একশ'টিরও বেশি বিরাট বুনিয়াদী প্রকল্প নির্মাণের ব্যাপারে কেন্দ্রীভূত থাকতেন। এ প্রকল্পগুলো চীনের সার্বিক জাতীয় শক্তি উন্নয়নের ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত ভালো ভিত্তি স্থাপন করেছে। কিন্তু এ প্রকল্পের বেশির ভাগ ছিল ভারি শিল্পের, ফলে তখন থেকে দীর্ঘদিন গোটা চীনের জীবনযাপনের সম্পদ সরবরাহে অপেক্ষাকৃত ঘাটতি ছিল।তখন চীন পরিকল্পনা অর্থনীতির যুগে ছিল। শহরাঞ্চলে সরবরাহ ব্যবস্থা চালু ছিল। মোটা কাপড়সহ নানা দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় জিনিস সবই বিশেষ টিকিট দিয়ে কেনতে হতো এবং সরবরাহের সীমাবদ্ধতা ছিল।১৯৭৮ সালে চীন সংস্কার ও উন্মুক্তকরন শুরু করে। তখন থেকে দেশের উন্নয়নের গুরুত্ব অর্থনৈতিক গঠনের ওপর দেয়া হয়। চীনের আধুনিকায়নের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পদক্ষেপ দিনে দিনে দ্রুততর হয়।১৯৮০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পটকা ফাটানোর আওয়াজে বৃদ্ধা লিউ কুই সিয়ান পেইচিংয়ে নয়া চীনের প্রথম ব্যক্তিগত রেস্তোরাঁ খোলেন। এ ছোট রেস্তোরাঁ লিউ কুই সিয়ানের জন্য স্বপ্নের ভালো জীবন বয়ে এনেছে। এখন তিনি আর তাঁর স্বামী পেইচিংয়ের উপকন্ঠে একটি চক মেলানো বাড়ী কিনেছেন এবং সুখী অবসর জীবন কাটাচ্ছেন।সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ কার্যকরের পর সারা চীনে ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। অর্থনীতির কাঠামো ধাপে ধাপে পরিকল্পনা অর্থনীতি থেকে বাজার অর্থনীতিতে রুপান্তর হয়েছে। এ পরিবর্তন চীনের অর্থনীতির উন্নয়নে বিরাট প্রাণশক্তি যুগিয়েছে। পণ্য সরবরাহ সমৃদ্ধ হয়েছে। চীনে ফিলিস্তিনের সাবেক রাষ্ট্রদূত সাফারিনি কার্যমেয়াদ শেষ হওয়ার পরও চীনে থেকে গেছেন। তিনি বর্তমান চীনের বাজারকে সত্যিকার মুক্ত বাজার মনে করেন। তিনি বলেন, 'এখন চীনের বাজারে প্রবেশ করলে নানা রকম বিচিত্র পণ্য দেখা যায়। ব্যবসায়ীরা সাবলীলভাবে ইংরেজী ও রুশ ভাষায় দেশি-বিদেশি ক্রেতাদের কাছে পণ্যের জাত ও গুণগত মান ব্যাখ্যা করেন। আপনি তাদের সঙ্গে দরকষাকষি করতে।'এখন চীন বস্তুগত পণ্যের ঘাটতির যুগ পুরোপুরি বিদায় করেছে। নিরঙ্কুশ পরিবার টেলিভিশন, রেফ্রিজারেটর, ওয়াশিং মেশিন ও কম্পিউটারসহ নানা ঘরোয়া বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি কিনেছে। আগে অনেকে ভাবতেও পারতো না যে, নিজের গাড়ির অধিকার হতে পারে। কিন্তু এখন তাও বাস্তবায়িত হয়েছে। ২৭ বছর বয়সী মা ইয়ুন লিয়াং একটি কোম্পানির কর্মী। গত মাসে তিনি নিজের জন্য একটি মোটর গাড়ি কিনেছেন। তিনি বলেন, 'এখন গাড়ি কেনা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। আমি মনে করি, দু'এক বছর কাজ করলে গাড়ি কেনা যায়। গাড়ি কেনার পর অফিসে যাওয়ার জন্য আর পাবলিক বাস ধরতে হয় না এবং উপকণ্ঠে ভ্রমণের জন্যও খুব সুবিধা।'পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০৮ সালে চীনের জি.ডি.পি ১৯৫২ সালের তুলনায় ৪০০ গুণ বেড়েছে। বিশ্বের চীনের অর্থনৈতিক অবস্থান চতুর্থ। মাথাপিছু জি.ডি.পি ৩০০০ মার্কিন ডলারেরও বেশি।ধনী হওয়ার পর চীনারা গাড়ি ও বাড়ি কেনার পাশাপাশি পর্যটনও পছন্দ করেন। উন্মুক্তকরণের মাত্রা সম্প্রসারণের সাথে সাথে চীনা পর্যটকদের পদচিহ্ন বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে পড়েছে। মিঃ হো সিন বিদেশে ভ্রমণ পছন্দ করেন। তিনি বলেন, 'আমি প্রায় প্রতি দু'এক বছরে একবার বিদেশ ভ্রমণ করি। আমি বৃটেন, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া গিয়েছিলাম। কয়েক দশক আগেও তা ভাবতে পারতাম না। তখন অন্যান্য প্রদেশে ভ্রমণ করাও সহজ ছিল না।'কিন্তু আগামী বছর মিঃ হোর বিদেশ ভ্রমণের পরিকল্পনা নেই। কারণ তিনি আগামী বছর মে মাসে শাংহাইয়ে গিয়ে বিশ্ব মেলা উপভোগ করতে চান।শাংহাই পৌর কমিটির সম্পাদক, শাংহাই বিশ্ব মেলার নির্বাহী কমিটির পরিচালক ইয়ু চাং শেং জানিয়েছেন, 'আগামী বছরের মার্চ মাসে শাংহাইয়ের সাবওয়ের দৈর্ঘ্য ৪০০ কিলোমিটার হবে। পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন জনগণের জীবনযাপনের মান আর অর্থনীতি চাঙ্গা করার ক্ষেত্রে লক্ষণীয় তাত্পর্য রয়েছে।' (ইয়ু কুয়াং ইউয়ে)
নয়া চীন প্রতিষ্ঠার ৬০ বছরে অর্জিত কূটনৈতিক সাফল্য (২য় অংশ)
2009-06-01 19:08:18
১৯৫৫ সালে বান্দুং সম্মেলনে চীনের তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী ও প্রথম পররাষ্ট্র মন্ত্রী চৌ এন লাই বলেছেন, 'আমরা কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যরা সবসময় সাহস করে বলি, আমরা সাম্যবাদে বিশ্বাস করি এবং মনে করি যে সমাজবাদী ব্যবস্থাই উত্তম। কিন্তু এ সম্মেলন ব্যক্তিগত চিন্তাভাবনা ও বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রচারের মঞ্চ নয়। চীনের প্রতিনিধি দলের এখানে আসার উদ্দেশ্য হলো সম্প্রীতির অন্বেষণ করা, অমিল সৃষ্টির জন্য নয়।'১৯৫৫ সালের এপ্রিল মাসের বান্দুং সম্মেলন হচ্ছে নয়া চীনের অংশগ্রহণ করা প্রথম বড় আকারের বহুপক্ষীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলন। এ সম্মেলনে চীনের উত্থাপিত পরস্পরের ভূভাগ ও সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান প্রদর্শন, পরস্পরের প্রতি আগ্রাসী মনোভাব পোষণ না করা, পারস্পরিক অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা, সমতা ও পারস্পরিক কল্যাণ এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করা, এই পাঁচটি মৌলিক নীতিকে আরো বেশি দেশকে অবহিত করা। এখন শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পঞ্চশীল নীতি সর্ব স্বীকৃত আন্তর্জাতিক সর্ম্পকের মৌলিক নীতিতে পরিণত হয়েছে।আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে চীন সবসময়ই শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পঞ্চশীল নীতির দৃঢ় অনুসরণকারী। এটা হচ্ছে চীনের বন্ধুত্বের সম্পর্ককে আরো বেশি সম্প্রসারিত করা, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোর সঙ্গে বন্ধুত্বের সংখ্যা বৃদ্ধিকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা। নয়া চীন প্রতিষ্ঠার প্রথম দিকে পাশ্চাত্যের বড় বড় দেশগুলো চীনকে ভিন্ন চোখে দেখতো। তথন কেবলমাত্র দশ বারোটি দেশ চীনের সঙ্গে তার কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে। আর এখন পর্যন্ত ১৭১টি দেশ চীনের সঙ্গে তাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে।নয়া চীন প্রতিষ্ঠার দ্বিতীয় দিন অর্থাত্ ১৯৪৯ সালের ২ অক্টোবর সোভিয়েট ইউনিয়ন সবার আগে চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের কথা ঘোষণা করে। ১৯৯১ সালের ডিসেম্বরে সোভিয়েট ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পরও রাশিয়া চীনের সঙ্গে তার কূটনৈতিক সম্পর্কের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে। কিছু দিন আগে চীনের প্রেসিডেন্ট হু চিন থাও লন্ডনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভের সঙ্গে সাক্ষাত্ করেন। দু'পক্ষ চীন ও রাশিয়ার কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বের সম্পর্ক ত্বরান্বিত করণ, যৌথভাবে আন্তর্জাতিক আর্থিক সংকট মোকাবিলা এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ে সহযোগিতা জোরদার করাসহ নানা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ মতৈক্যে পৌঁছান।৯০ বছর বয়সী রুশ বৃদ্ধ টিখভিনস্কি পেইচিংয়ে সোভিয়েট ইউনিয়নের কন্সুলার জেনারেল ছিলেন। তিনি দু'দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের প্রক্রিয়া নিজ চোখে দেখেছেন। ২০০৮ সালের অক্টোবরে চীনের প্রধানমন্ত্রী ওয়েন চিয়া পাও মস্কো সফরকালে টিখভিনস্কির সঙ্গে সাক্ষাত্কালে বলেছেন, '৬০ বছর আগে আপনি পেইচিংয়ে সাবেক সোভিয়েট ইউনিয়নের কন্সুলার জেনারেল এবং নয়া চীন প্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। চীন ও রাশিয়ার জনগণের মৈত্রী সুদীর্ঘকালের, তা কোন দিন ব্যাহত হবে না। যদি আপনার শরীরের অবস্থা ভালো থাকে, তাহলে দু'দেশের 'ভাষা বর্ষ' আয়োজনের সময় আমি আপনাকে আবার পেইচিং সফরের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।'গত শতাব্দীর ৬০ ও ৭০'র দশকে প্রবেশের পর চীন ও পাশ্চাত্য দেশগুলোর সম্পর্ক সহজ ও সাবলীল হয়ে উঠে। এ সময়েই চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়।গত শতাব্দীর ৬০'র দশকের শেষ দিক থেকে ৭০'র দশকের শেষ দিক পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য পাশ্চাত্য দেশ নিজেদের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে চীনের প্রতি তাদের নীতি সুবিন্যস্ত করে। বিখ্যাত 'টেবিল টেনিস কূটনীতি' দিয়ে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার বিশ বছরেরও বেশি দিন বন্ধ থাকা দ্বার খুলে যায়। ১৯৭১ সালে হেনরি কিসিংগার গোপনে চীন সফর করেন। এরপর রিচার্ড নিক্সন চীন সফরে আসেন এবং চীন-যুক্তরাষ্ট্রের সংযুক্ত ইস্তেহার প্রকাশ করেন। ১৯৭৯ সালের জানুয়ারী মাসে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে।কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার প্রথম দিকে দু'দেশের মধ্যেকার বাণিজ্যিক মূল্য ২৫০ কোটি মার্কিন ডলারেরও কম ছিল। এখন এ সংখ্যা প্রায় ৩০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এ বছরের এপ্রিল মাসে চীনের প্রেসিডেন্ট হু চিন থাও ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা লন্ডনে সাক্ষাত্কালে একবিংশ শতাব্দীতে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সার্বিক ইতিবাচক সহযোগিতামূলক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার বিষয়ে মতৈক্যে পৌঁছান এবং দু'দেশের ভবিষ্যত উন্নয়নের জন্য নতুন পরিকল্পনা নেন।জাতিসংঘ ভবনের স্বর্ণ সভা কক্ষ হচ্ছে জাতিসংঘের অধিবেশন আয়োজনের স্থান। এখানকার আসনের বিন্যাস বছরে একবার বদলে যায়। প্রতিটি আসনেই সদস্য দেশগুলোর রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় মর্যাদাকে তুলে ধরা হয়। ১৯৭১ সালের অক্টোবরে জাতিসংঘের ২৬তম সাধারণ পরিষদে ২৭৫৮ নং সিদ্ধান্ত গ্রহণের মধ্য দিয়ে জাতিসংঘে চীন গণ প্রজাতন্ত্রের বৈধ অধিকার পুনরুদ্ধার হয়েছে।জাতিসংঘে চীনের সাবেক প্রধান প্রতিনিধি লিং ছিং জাতিসংঘে চীনের বৈধ মর্যাদা পুনরুদ্ধারে সচেষ্ট ছিলেন। তিনি স্মরণ করে বলেন, 'সারা বিশ্বের একমাত্র আন্তর্জাতিক সংগঠন – জাতিসংঘ আর এই জাতিসংঘে চীনের মর্যাদা পুনরুদ্ধার করা হচ্ছে চীনের কূটনৈতিক ক্ষেত্রের একটি বড় বিজয়। কারণ চীনের পররাষ্ট্র নীতি হচ্ছে বিশ্ব শান্তি রক্ষা করা, অভিন্ন উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা এবং তৃতীয় বিশ্বকে সমর্থন করা। এটা হচ্ছে আমাদের মৌলিক নীতি। এ ধরনের একটি রাজনৈতিক শক্তি জাতিসংঘে প্রবেশ করা মানেই বিশ্বে আমাদের প্রভাব বলয়কে বাড়িয়ে দেয়া।'জাতিসংঘে চীনের মর্যাদা পুনরুদ্ধারের ভেতর দিয়ে চীন ও জাতিসংঘের সহযোগিতার এক নতুন অধ্যায় উন্মোচিত হয়েছে। চীনের বহুপক্ষীয় কূটনীতিও তখন থেকেই শুরু হয়ে যায়। ১৯৭৮ সালের আগে প্রায় ৩০ বছরে চীনের নেতৃবৃন্দ কেবলমাত্র ছ' বার বহুপক্ষীয় কূটনৈতিক কর্মসূচীতে উপস্থিত হতে পেরেছিলেন। তারপর থেকে আজ পর্যন্ত চীন ১০০টিরও বেশি সরকারী পর্যায়ের আন্তর্জাতিক সংস্থা, ৩০০টিরও বেশি আন্তর্জাতিক কনভেনশন এবং জাতিসংঘের ২২টি শান্তি রক্ষী কর্মসূচীতে অংশ নিয়েছে। চীন মোট দশ হাজার শান্তিরক্ষী কর্মীকে বিভিন্ন দেশে পাঠিয়েছে। চীন বিশ্বের শান্তি রক্ষা এবং অভিন্ন উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার একটি সক্রিয় শক্তি হিসেবে দিনে দিনে আরো গঠনমূলক ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।নতুন শতাব্দী প্রবেশের পর চীন 'সুষম বিশ্বের' তত্ত্ব উত্থাপন করেছে। চীনের বর্তমান পররাষ্ট্র মন্ত্রী ইয়াং চিয়ে ছি এ সম্পর্কে বলেছেন, 'বর্তমান বিশ্ব কূটনীতি শূন্য হওয়া উচিত নয়। পারস্পরিক কল্যাণ ও অভিন্ন সাফল্য অর্জনের পরিস্থিতি সৃষ্টি করা উচিত। চীনের কূটনীতি সবসময় চীনা জাতির সুষম, সহযোগিতা, পারস্পরিক কল্যাণ ও সকলের সাফল্য অর্জনের ধ্যানধারনা অনুসরণ করে।' (ইয়ু কুয়াং ইউয়ে)
নয়া চীন প্রতিষ্ঠার ৬০ বছরে কৃষি ক্ষেত্রের সাফল্য (৩য় অংশ)
2009-06-08 18:24:10
খাদ্য সমস্যা ছিল একসময় চীনের বড় সমস্যা। ১৯৪৩ সালে মধ্য চীনের ছাংশা শহরে লোং ইয়ো থু'র জন্ম হয়। এখন তিনি বোয়াও এশিয়া ফোরামের মহাসচিব। চীনে তিনি একজন গণমান্য ব্যক্তি। অতীতের অভিজ্ঞতা স্মরণ করে তিনি বলেন, 'আমাদের এ প্রজন্মের মানুষ অনাহারের কষ্ট ও নানা কঠিন অবস্থা অতিক্রম করেছি। আমরা পেট ভরে খেতে পারতাম না। আমরা খিদে লাগলে মিষ্টি কুমড়া সিদ্ধ করে খেতাম। ফলে শেষে যখন আমি মিষ্টি কুমড়ার গন্ধ পেতাম তখন বমি বোধ করতাম।'চীন একটি ঐতিহ্যিক বড় কৃষি প্রধান দেশ। মোট জনসংখ্যার অধিকাংশই হচ্ছে কৃষক। গত শতাব্দীর ৪০'র দশকে কৃষি উত্পাদনের পদ্ধতি অনুন্নত হওয়া, অনাবৃষ্টি ও বন্যাসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে চীনের কৃষি উত্পাদনের অবস্থা মন্দ ছিল। প্রধান কৃষিজাত দ্রব্যের গুরুতর ঘাটতি ছিল। তা ছাড়া তখন যুদ্ধও অব্যাহত থাকায় অসংখ্য লোক পেট ভরে খেতে পারতো না এবং গায়ে গরম কাপড় পরতে পেতো না। ১৯৪৯ সালে চীনের কৃষকের মাথাপিছু বরাদ্দ খাদ্যশস্যের পরিমাণ ছিল কেবল ১৮০ কেজি।১৯৪৯ সালে চীন গণ প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর চীন সরকার তিন বছর সময় ধরে ভূমি সংস্কার করেছে। জমিদারদের হাতে কেন্দ্রীভূত জমি, কৃষি যন্ত্রপাতি ও গবাদি পশু কৃষকদের মধ্যে বন্টন করা হয়েছে। এ নীতি কৃষকদের নিরংকুশ সমর্থন পেয়েছে। কৃষি উত্পাদন ব্যবস্থা দ্রুত পুনরুদ্ধার ও উন্নয়ন হয়েছে। খাদ্যশস্য ও তুলা উত্পাদনের পরিমাণ অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। ১৯৫২ সালের পর চীন ফসলের ক্ষেতে জলসেচের ব্যবস্থা নির্মাণ আর কৃষি প্রযুক্তির সংস্কার করে, এর মধ্য দিয়ে চীনের কৃষি উত্পাদনের পরিবেশ স্পষ্টত উন্নতি হয়েছে। কৃষিজাত দ্রব্যের পরিমাণ দ্রুত বৃদ্ধি হয়। বিংশ শতাব্দীর ৭০'র দশকের শেষ দিকে চীনের খাদ্যশস্য ও তুলা উত্পাদনের পরিমাণ ১৯৫২ সালের চেয়ে দ্বিগুণ বেড়েছে।খাদ্যশস্যের উত্পাদনের পরিমাণে ব্যাপক প্রবৃদ্ধি হলেও জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধির কারণে চীনের কৃষিজাত দ্রব্যের সরবরাহের চেয়ে চাহিদা বেশি ছিল। আনহু প্রদেশের ছিচৌ শহরের বিশাং গ্রামের কৃষক ইয়াং চি লিয়াং বলেছেন, 'গত শতাবদ্ধীর ৬০ ও ৭০ দশকে খাদ্য সমস্যা ছিল। খিদে পেলে বুনো শাকপাতাও খেতাম।'তখন চীনের আবাদী জমি গ্রামের অধীনে ঐক্যবদ্ধভাবে পরিচালিত ছিল। কৃষকরা সবাই একসাথে শ্রম দিতেন এবং সমান সমান শ্রমের ফসল ভাগ করতেন। ফলে কৃষকদের কাজের সক্রিয়তা কম ছিল। ১৯৭৮ সালের শেষ দিকে আনহুই প্রদেশের সিয়াওকাং গ্রামের কৃষকরা সবার আগে আবাদী জমিকে কৃষকদের হাতে ভাগ করে নিজের ইচ্ছে মতো জমি চাষ করার সিদ্ধান্ত নেন। সে বছর এ গ্রামের খাদ্যশস্যের উত্পাদনের পরিমাণ এর আগের দশ বছরের বার্ষিক উত্পাদনের পরিমাণের চেয়ে চার গুণ বেশি হয়েছে। চীন সরকার ১৯৮০ সালে সারা দেশের গ্রামাঞ্চলে সিয়াওকাং গ্রামের অভিজ্ঞতা সম্প্রসারণ করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং এ ব্যবস্থাকে পরিবারভিত্তিক সংযুক্ত উত্পাদনের ঠিকা ব্যবস্থা নাম দেয়া হয়।ইয়াং চি লিয়াং বলেন, '৮০ ও ৯০'র দশকে সংযুক্ত উত্পাদনের ঠিকা ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর কৃষকদের স্বাধীনতা আর খাদ্যশস্য চাষ করার সক্রিয়তা বেড়েছে। খাদ্য সমস্যার মোটামুটি সমাধান হয়েছে।'পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৯৭৮ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত চীনের কৃষি ক্ষেত্রে উত্পাদনের পরিমাণ প্রতি বছর প্রায় ৮ শতাংশ বৃদ্ধির হার বাস্তবায়িত হয়েছে। তখন থেকেই চীনের খাদ্যশস্য উত্পাদনে একটানা স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধির প্রবণতা বজায় রয়েছে। ২০০৮ সালে চীনে খাদ্যশস্য উত্পাদনের পরিমাণ ৫০ কোটি টন ছাড়িয়ে গেছে।চীনের জাতীয় খাদ্যশস্য ব্যুরোর খাদ্যশস্য মজুদের পরিকল্পনা বিষয়ক কর্মকর্তা মাদাম লিউ তুং চু বলেছেন, চীনারা নিজেদের প্রচেষ্টায় তাদের খাওয়া পরার সমস্যা সমাধান করেছে। চীন বিশ্বের ৭ শতাংশ আবাদী জমিতে বিশ্বের ২২ শতাংশ জনসংখ্যা লালনপালন করতে সক্ষম হয়েছে। এটা একটা বিস্ময় বলা যায়।'খাদ্যশস্যের ব্যাপারে চীন সবসময় অভ্যন্তরীন ভিত্তিতে খাদ্যশস্যের সরবরাহ নিশ্চিত করার নীতি অনুসরণ করে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের খাদ্যশস্যের ব্যয়ের পরিমাণ আর উত্পাদন পরিমাণে মোটামুটি ভারসাম্য রয়েছে। খাদ্যশস্যের আত্মনির্ভরশীলতার হার ৯৫ শতাংশের ওপর বজায় রয়েছে।'কৃষকদের খাদ্যশস্য চাষের সক্রিয়তা আরো বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে চীন সরকার গত কয়েক বছর ধরে কৃষকদের খাদ্যশস্য চাষ ও কৃষিজাত যন্ত্রপাতি কেনার জন্য সরাসরি ভর্তুকি দিয়েছে। ২০০৭ সাল পর্যন্ত চীন সরকার কৃষকদেরকে মোট ৬০ বিলিয়ন ইউয়ানেরও বেশি রেনমিনপি ভর্তুকি দিয়েছে। চীন সরকার ধারাবাহিকভাবে কৃষি ক্ষেত্রের ভর্তুকি দেয়ার মাত্রা বাড়াচ্ছে। কৃষকদের আয় বৃদ্ধির নিশ্চয়তার উদ্দেশ্যে সরকার খাদ্যশস্য কেনার সর্বনিম্ন দাম বাড়িয়ে দিয়েছে, দেশের খাদ্যশস্য, ভোজ্য তেল ও শূকরের মাংস মজুতের পরিমাণ সম্প্রসারণ করেছে, খাদ্যশস্যের প্রধান উত্পাদন অঞ্চলকে আর্থিক সহায়তার মাত্রা বাড়িয়েছে। চীন সরকার মফস্বল শিল্পপ্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন আর গ্রামাঞ্চলের অতিরিক্ত শ্রমশক্তিকে শহরে কর্মসংস্থানের উত্সাহ দেয়ার মাধ্যমে গ্রামের জনসংখ্যার কর্মসংস্থান সমস্যার সমাধান করেছে এবং পল্লী অর্থনীতি ত্বরান্বিত করেছে। তা ছাড়া চীন ৮ বছর আগে থেকে ধাপে ধাপে কৃষি কর বাতিলের কাজ শুরু করে। ২০০৬ সাল পর্যন্ত চীন সার্বিকভাবে কৃষি কর বাতিল করে ২৬০০ বছর ধরে চীনা কৃষকদের জমি চাষের ওপর শুল্ক আদায় করার ইতিহাস অবশান করেছে। এ ব্যবস্থার ফলে প্রতি বছর কৃষকদের মোট ১৩০ বিলিয়ন ইউয়ান রেনমিনপির কর মওকুফ হয়েছে।এ সব ব্যবস্থার মাধ্যমে চীনের কৃষকরা আগের চেয়ে অনেক ধনী হয়েছে। তাদের জীবনযাপনের মান অনেক উন্নত হয়েছে। বিশাং গ্রামের বর্তমান জীবন সম্পর্কে বলতে গেলে কৃষক ইয়াং চি লিয়াংয়ের হাসিভরা মুখ আর বন্ধ হয় না। তিনি বলেন, 'এখন আমাদের বৈদ্যুতিক বাতি, টেলিফোন, উচ্চ ভবনের বাড়ি, আধুনিক পরিবহন যন্ত্র ও টেলিযোগাযোগের সাজসরঞ্জাম সবই উন্নত হয়েছে।'এখন চীনা কৃষকের মাথাপিছু আয় ১৯৭৮ সালের ৩০ গুণ। চীনের অত্যন্ত দারিদ্র্য জনসংখ্যা ২৫ কোটি থেকে নেমে ১ কোটি ৫০ লাখেরও কমে এসে দাঁড়িয়েছে। (ইয়ু কুয়াং ইউয়ে)
নয়া চীনের ৬০ বছরে আইন গঠনের সাফল্য (৪র্থ অংশ)
2009-06-09 20:41:23
১৯৪৯ সালের ১ অক্টোবর মাও সে তুং এর চীন গণ প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষণার আওয়াজ তাত্ক্ষণিকভাবে থিয়ান আন মেন মহাচত্বরে সম্মিলিত জনসাধারণের তুমুল হর্ষধ্বনির মধ্যে ডুবে যায়। চীনের ইতিহাসে তখন থেকেই একটি নতুন অধ্যায়ের উন্মোচন হয়।চীনের নতুন কর্তৃপক্ষ আর অতীতের সমাজ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভিন্ন। জনতা দেশের সব ক্ষমতার অধিকারী। দেশটি শোষণহীন ও বিভাজন মুক্ত এবং একসাথে সমৃদ্ধ হওয়ার সুদূরপ্রসারী লক্ষ্যবস্তুর দিকে ধাবিত হয়। নতুন চীন প্রতিষ্ঠার পঞ্চম বছরে 'চীন গণ প্রজাতন্ত্রের সংবিধান' প্রকাশিত হয়। সংবিধান প্রকাশের আগে সারা দেশের সকল জনগণ এর খসড়া নিয়ে তিন মাসব্যাপী আলোচনা করে এবং মোট ১৩ লাখ ৮০ হাজার মতামত সংগৃহীত হয়। জনগণের মতামতের ভিত্তিতেই খসড়া সংশোধনের পর সংবিধান প্রণয়ন ও প্রকাশিত হয়। বিখ্যাত আইনবিদ লি বু ইয়ুন এক সাক্ষাত্কার দেয়ার সময় বিশেষ করে এ সংবিধানের দুটি মৌলিক নীতির কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, 'আমাদের সংবিধান ১৯৫৪ সালের এ সংবিধান খুব কার্যকর। এর মধ্যে দুটি মৌলিক নীতি হচ্ছে আইনের স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক আইন প্রণয়ন।'প্রথম সংবিধানের সঙ্গে 'গণ কংগ্রেসের সংগঠন আইন', 'গণ আদালতের সংগঠন আইন'ও প্রকাশিত হয়। নয়া চীনের আইনী শাসনের প্রথম স্বর্ণ যুগ তখন থেকেই শুরু হয়। দেশের কর্তৃপক্ষ, ক্ষমতাসীন সংস্থা ও বিচার সংস্থা আইনানুসারে পরিচালিত হয়। তখন আইনের ওপর গবেষণা সবেমাত্র শুরু হলেও উত্সাহব্যঞ্জকভাবে তা সম্প্রসারিত হয়েছে। তখন মাত্র ২০ বছর বয়সী লি বু ইয়ুন বিখ্যাত উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পেইচিং বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হয়ে আইন বিষয়ের ওপর গবেষণার সঙ্গে আজীবন সম্পর্ক গড়ে তুলেন। তিনি বলেন, 'আমরা মহা সাংস্কৃতিক বিপ্লব অতিক্রম করেছি। গোটা পার্টি ও সারা দেশের জনগণ গভীরভাবে আত্মজিজ্ঞাসায় নিবেদিত। তা হলো আইন না থাকলে হবে না। আইনানুসারে দেশ শাসন করা হচ্ছে ইতিহাসের নিয়ম ও মানবজাতির সভ্যতাও অগ্রগতির প্রয়োজনীয় চাহিদা।'১৯৭৮ সাল হচ্ছে নয়া চীনের ইতিহাসে এক স্মরণীয় বছর। এ বছর থেকে শুরু সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের মাধ্যমে বর্তমান চীন শক্তিশালী দেশের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। চীন 'সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্রের উন্নয়ন এবং সমাজতান্ত্রিক আইন প্রশাসন গড়ে তোলা' এ দুটি বিষয় স্পষ্টভাবে উত্থাপন করেছে। 'ফৌজদারী মামলা আইন' ও 'ফৌজদারী আইন'সহ নানা ক্ষেত্রের আইন প্রণয়নের মধ্য দিয়ে চীনের আইনের শাসন 'স্বর্ণ যুগে' প্রবেশ করে।এখন সংবিধানকে কেন্দ্র করে গঠিত চীনের বিশিষ্ট সমাজতান্ত্রিক আইনী ব্যবস্থা মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। 'আইনের সামনে সবাই সমান', 'আইনানুসারে দেশ শাসন করা', 'দেশের মানবাধিকার সম্মান ও তা রক্ষা করা', 'নাগরিকের সম্পত্তি লঙ্ঘন করা যায় না'সহ নানা মৌলিক নীতি সংবিধানে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। ১৯৯৯ সালে আইনানুসারে দেশকে শাসন করা চীনের মৌলিক নীতিতে পরিণত হয়েছে। আইনবিদ লি বু ইয়ুন গর্বিত কন্ঠে নিজের পেশাগত জীবনের সারসংকলন করে বলেছেন, 'আমার গবেষণার জীবনে দুটি কাজ উল্লেখযোগ্য। একটি হচ্ছে আইনানুসারে দেশ শাসন করার প্রস্তাব এবং আরেকটি হচ্ছে মানবাধিকারকে সমর্থন জানানো। এ দুটি বিষয় চীনের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।'এখন চীনের 'সংবিধান' ও 'আইন প্রণয়নের আইন' এর মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ ও ভিন্ন পর্যায়ের বৈজ্ঞানিক আইন প্রণয়ন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। এখন চীনের সংবিধান ও এ সংশ্লিষ্ট আইন, বাণিজ্য আইন, ব্যবস্থাপনা আইন, অর্থনীতি আইন, সামাজিক আইন ও ফৌজদারী আইনসহ মোট ২৩১টি আইন প্রণীত হয়েছে। চীনের অর্থনীতি, রাজনীতি, সংস্কৃতি ও সমাজ জীবনের নানা ক্ষেত্রে আইনানুসারে চীনকে শাসনের মাত্রার অনেক উন্নতি হয়েছে।আইনী শাসন ক্ষেত্রের অনেক সফলতার পরিমাপ করা যায় না। যেমন বর্তমানে চীনে আইন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬০০টিরও বেশি। আইন বিষয়ক গবেষণায়ও বিরাট অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। বিপুল পরিমান দেশি-বিদেশি পেশাগত বইও প্রকাশিত হয়েছে। এর পাশাপাশি আইন প্রণয়নের বৈজ্ঞানিক ও গণতান্ত্রিক পদ্ধতিও নিশ্চয়তা পেয়েছে। এখন আইনের খসড়া সমাজের কাছে মতামত সংগ্রহ করার মাধ্যমে প্রণয়ন নিয়মিত কর্মকান্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেবামূলক সরকার ও আইন ব্যবস্থার সংস্কারের মধ্য দিয়ে চীনের জনসাধারণ সত্যিকার অর্থেই আইনানুসারে দেশ শাসন এবং ন্যায়সংগত ও আইন অনুযায়ী বিচারের মান উন্নয়নের দিকটি অনুভব করেছেন। ক্ষমতার প্রতি আইনের তত্ত্বাবধানও জোরদার হয়েছে। লি বু ইয়ুন আরো বলেন, 'আইনী শাসন ও মানবাধিকার এ দুটি ধারণা এখন ব্যাপক জনসাধারণ ও ক্যাডারদের এক ধরনের চিন্তাভাবনার খোরাকে পরিণত হয়েছে। এ বিষয় আমি খুব সন্তুষ্টি বোধ করি।'লি বু ইয়ুনের মতে, নয়া চীন প্রতিষ্ঠার ৬০ বছরে চীনাদের মানবাধিকার নির্ভরযোগ্য আইনের নিশ্চয়তা পেয়েছে। চীনে 'মানবাধিকারকে সম্মান ও নিশ্চিত করা এবং মানবাধিকার ব্রতের সার্বিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা'কে সমাজের প্রধান ধারা হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। তা ছাড়া, 'রাষ্ট্র মানবাধিকারকে সম্মান ও নিশ্চিত করবে, তা সংবিধানে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এখন চীনে মানবাধিকার নিশ্চয়তা সংক্রান্ত আইন আর অনুমোদিত আন্তর্জাতিক চুক্তির সংখ্যা ২৫০টিরও বেশি। বর্তমান চীনে নারী, বৃদ্ধবৃদ্ধা, বয়োজ্যেষ্ঠ, অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি, প্রতিবন্ধী ও সংখ্যালঘু জাতিসহ বিশেষ গোষ্ঠীর অধিকার ও স্বার্থ রক্ষার বিশেষ আইন আছে।লি বু ইয়ুন চীনের আইনী শাসন কাজে অংশগ্রহণকারী ও প্রত্যক্ষদর্শীতে পরিণত হয়েছেন।চীনের প্রধানমন্ত্রী ওয়েন চিয়া পাও বলেছিলেন, 'গণতন্ত্র, আইনী শাসন, মুক্তি, মানবাধিকার, সমতা ও মানবজাতির প্রতি ভালোবাসা এ সব পুজিবাদী বৈশিষ্টের জিনিস নয়। এটা হচ্ছে সুদীর্ঘ ঐতিহাসিক প্রক্রিয়ায় গোটা বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত সভ্যতার সফলতা এবং মানবজাতির অভিন্ন মূল্যবোধ।'আইনী শাসনের ধারণা চীনে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। লি বু ইউয়ুনসহ চীনের বহু আইনবিদ মনে করেন, চীনের আইনী শাসন ব্যবস্থায় নিজের বৈশিষ্ট্য রয়েছে। চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ ব্যাপক ও গভীরতর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আইনী শাসনের বিশ্বায়নের প্রভাবও দিন দিন লক্ষণীয় হয়ে উঠবে। (ইয়ু কুয়াং ইউয়ে)
নয়া চীনের ৬০ বছরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রের সাফল্য (শেষ অংশ)
2009-07-06 23:15:19
'শেনচৌ-সাত নভোযানের ক্যাবিনেটের বাইরে এসেছি। শারীরিক অবস্থা ভালো। শেনচৌ-সাত সারা দেশ এবং সারা বিশ্বের জনগণের কাছে শুভেচ্ছা জানায়।'২০০৮ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর পৃথিবী থেকে ৩০০ কিলোমিটার দূরে মহাশূন্যে চীনের নভোচারী চাই চি কাং মহাশূন্যে চীনা ব্যক্তির প্রথম পদক্ষেপ এগিয়েছেন। আপনারা এই মাত্র মহাকাশে চাই চি কাংয়ের চীনা জনগণ ও বিশ্বের জনগণের প্রতি শুভেচ্ছা জানানোর রেকর্ডিং শুনলেন। এ ঐতিহাসিক তাত্পর্যসম্পন্ন প্রক্রিয়ায় প্রমাণিত হয়েছে যে, চাই চি কাং মহাকাশে পদচারণা করা প্রথম চীনা ব্যক্তি হয়েছেন এবং রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের পর চীন পৃথিবীতে মহাশূন্যে নভোযানের বাইরে যাওয়ার প্রযুক্তির অধিকারী তৃতীয় দেশে পরিণত হয়েছে।মানববাহী নভোযানের প্রযুক্তি হচ্ছে বহু বিজ্ঞান মিশ্রিত মহান প্রযুক্তি। তার মধ্য দিয়ে এক দেশের সার্বিক বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত শক্তি প্রতিফলিত হয়। এটা রকেট, নভোযান ও টেলিযোগাযোগসহ সাতটি বিশাল ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত। মহাকাশ প্রযুক্তি হচ্ছে বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে জটিল, সবচেয়ে বিশাল ও সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিসম্পন্ন প্রকল্প। চীনের মানববাহী নভোযানের প্রকল্পের উপ-মহাপরিচালক চাং চিয়ান ছি বলেছেন, যদি উচ্চ মানের উন্নত বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি ও গবেষণার সামর্থ্য না থাকে, তাহলে মহাশূন্যে নভোযানের বাইরে গিয়ে তত্পরতা চালানো সম্ভব নয়।চীনের মানববাহী মহাকাশযান প্রকল্পের জন্য ১ লাখেরও বেশি প্রযুক্তিবিদ এবং একশ'টিরও বেশি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সংস্থা ও শিল্প প্রতিষ্ঠান এতে অংশ নিয়েছে। এখন চীনে ৩ কোটি ৫০ লাখ প্রযুক্তিবিদ আছেন। প্রতি বছর গোটা দেশে বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য ৩০০ বিলিয়ন ইউয়ানেরও বেশি রেনমিনপি ব্যয় করা হয়। কিন্তু ৬০ বছর আগে নয়া চীন প্রতিষ্ঠার প্রথম দিকে সারা চীনে বিশেষ করে বৈজ্ঞানিক গবেষণা কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন মাত্র ৫০০ জন। তখন মহাকাশে যাওয়া ছিল চীনাদের জন্য একটি সূদূর স্বপ্ন।নয়া চীন প্রতিষ্ঠার প্রথম দিকে চীন সরকার বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত শিল্পের উন্নয়নকে গুরুত্বপূর্ণ মর্যাদা দিয়েছে এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উন্নয়নের দীর্ঘকালীন পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। ১৯৬৪ সালে উত্তর-পশ্চিম চীনের মরুভূমিতে চীনের প্রথম পারমাণবিক বোমার সাফল্যের সঙ্গে বিস্ফোরন ঘটানো হয়েছে। এ খবরটি সারা বিশ্বকে বিস্মিত করেছে। তিন বছর পর চীনের প্রথম হাইড্রোজেন বোমার বিস্ফোরণও সফল হয়। ১৯৭০ সালে চীনের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ –তুংফাংহোং এক নম্বরকে সাফল্যের সঙ্গে মহাকাশে পাঠানো হয়। 'দুটি বোমা ও একটি উপগ্রহ' চীনের বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত শক্তি আর প্রতিরক্ষামূলক শক্তি বৃদ্ধি করেছে, আন্তর্জাতিক মঞ্চে চীনের গুরুত্বপূর্ণ মর্যাদা স্থাপন করেছে এবং মহাশূন্যে চীনের আরো বেশি অন্বেষণের জন্য প্রযুক্তি ও দক্ষ ব্যক্তিসহ নানা প্রয়োজনীয় শর্ত প্রস্তুত করেছে। চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা মেই ইয়োং হোং বলেছেন, 'আমাদের দেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অপেক্ষাকৃত উচ্চ মানের এবং পরিপূর্ণ। তা ছাড়া আমাদের সমৃদ্ধ বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত জনশক্তি আছে। এসব ক্ষেত্রে চীন বিশ্বের প্রথম সারিতে রয়েছে।'১৯৭৮ সালে চীন সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ নীতি কার্যকর করে। তখন থেকে চীন 'বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি হচ্ছে প্রথম উত্পাদন শক্তি' এ কৌশলগত চিন্তাধারা নির্ধারণ করে এবং সক্রিয়ভাবে কিছু বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রকল্প কার্যকরের সাংগঠনিক কাজ শুরু করে। এখন প্রতি বছর চীনে কাঠামোগত গবেষণা, জ্বালানি, কৃষি ও প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণসহ নানা ক্ষেত্রের প্রায় ২০ হাজারটি বৈজ্ঞানিক সাফল্য পরিলক্ষিত হয়। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ভূমিকা দিন দিন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে এবং জনগণের জীবনযাপনের ওপর এর প্রভাবও দিন দিন বাড়ছে। চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের গবেষণা কার্যালয়ের পরিচালক সুয়ে হো পিং বলেন, 'আমাদের দেশের বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত শক্তি আন্তর্জাতিক উন্নত মানের ব্যবধান আরো কমেছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিশ্বের প্রথম সারিতে প্রবেশ করেছে। বিশ্বের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উন্নয়নের ওপর চীনের প্রভাব দ্রুত বাড়ছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা এবং দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বলিষ্ঠ সমর্থন দিয়েছে।'চীনারা বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত সাফল্যের সৃষ্ট বিরাট পরিবর্তন উপভোগ করার পাশাপাশি বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতিতে গর্বিত বোধ করছেন। মানববাহী নভোযান সাফল্যের সঙ্গে উতক্ষেপনের পর কয়েক জন শহরবাসী সাক্ষাত্কার দিয়েছেন।মাদাম ওয়াং বলেন, 'আমার খুব গর্ব বোধ হয়। আমি মনে করি, আমাদের দেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতি আমাদের দেশের রাষ্ট্রীয় শক্তি বৃদ্ধির প্রমান করেছে। এর সুদূরপ্রসারী তাত্পর্য আছে। আমি চীনা নভোচারীদেরকে বলতে চাই, আপনারা হচ্ছেন জাতীয় বীর।'মিঃ লিউ বলেন, 'শেনচৌ-সাতের সাফল্যের সাথে উতক্ষেপণ হচ্ছে চীনের মহাকাশযান ইতিহাসের আরেকটি অগ্রগতি। এটা বিশ্বকে বিস্মিত করেছে। আমরা খুব গর্বিত বোধ করি।'গত শতাব্দীর ৯০'র দশকের প্রথম দিক থেকে চীনের মানববাহী মহাকাশযান প্রকল্পের কাজ শুরু করে। প্রথম মানববাহী নভোযান উতক্ষেপনের আগে চীন নিজের তৈরি ১৫ ধরনের ৫০টিরও বেশি কৃত্রিম উপগ্রহ উতক্ষেপন করেছে। তা ছাড়া চীন নিজেই দশ বারো ধরনের 'লং মার্চ' ধারাবাহিক পরিবাহন রকেট উত্পাদন করেছে এবং তা দিয়ে ৭০টিরও বেশি দেশি-বিদেশি উপগ্রহকে মহাকাশে পাঠিয়েছে।২০০৩ সালের অক্টোবরে চীন প্রথম বার মানুষবাহী মহাকাশযান তৈরী করেছে। নভোচারী ইয়াং লি ওয়েই মহাশূন্যে ২১ ঘন্টা ভ্রমণ করেছেন। ২০০৫ সালে চীন দ্বিতীয় বার মানববাহী মহাকাশযান উতক্ষেপন করে, চীনের দু'জন নভোচারী মহাশূন্যে পাঁচ দিন উড্ডয়নের পর সাফল্যের সঙ্গে ফিরে এসেছেন। ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে তিনজন নভোচারী শেনচৌ-সাত মানববাহী নভোযানের সাহায্যে মহাশূন্যে প্রায় তিন দিন কাটিয়েছেন। এবার নভোচারী চাই চি কাং মহাশূন্যে প্রথম চীনা ব্যক্তি হিসেবে পদচারণা করেছেন।এর পাশাপাশি চীনাদের দৃষ্টি এখন আরো দূরে চন্দ্রের দিকে। ২০০৭ সালের অক্টোবরে চীনের প্রথম চন্দ্র অনুসন্ধান উপগ্রহ –ছাংও-এক নম্বর উতক্ষেপিত হয়েছে। এরপর এক বছরে ছাংও-এক সাফল্যের সঙ্গে পূর্ব নির্ধারিত নানা অনুসন্ধানের কাজ সম্পন্ন করেছে। চীনের চন্দ্র অনুসন্ধান প্রকল্পের সাধারণ স্থপতি সুন চিয়া তোং আমাদের সংবাদদাতাকে দেয়া এক সাক্ষাত্কারে বলেছেন, 'এর আগে আমাদের সব মহাকাশের তত্পরতা মোটামোটি সবই পৃথিবীর নিকটে হয়েছে। অর্থাত্ পৃথিবী থেকে কয়েক শ কিলোমিটার, কয়েক হাজার কিলোমিটার বা আরো একটু দূরের দিকে অভিযান চালিয়েছে। যখন আমরা মহাকাশযানের কিছু প্রযুক্তি আয়ত্ত করতে পেরেছি তখন আমরা অবশ্যই আরো গভীর মহাশূন্যে অন্বেষণের কাজ শুরু করবো। এর প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে চন্দ্র অনুসন্ধান।'(ইয়ু কুয়াং ইউয়ে)
>>>>>>>>>>>>>>>সমাপ্ত<<<<<<<<<<<<<<<
প্রচারনায়:
সি.আর.আই-সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাব, ডিএক্সীং নিউজ এবং বিশ্ব বন্ধন
0 comments:
Post a Comment