চীনের ৬০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে
বিশাল কুচকাওয়াজ ও জনসাধারণের শোভাযাত্রা
থান ইয়াও খা: চীনের জনগণের জন্য ১লা অক্টোবর একটি অবিস্মরণীয় দিন । ১৯৪৯ সালের ১লা অক্টোবর চীনের প্রয়াত শীর্ষনেতা মাও সে তুং পেইচিংয়ের থিয়ান আন মেন মহাচত্বরে নয়া চীনের জন্মের কথা ঘোষণা করেন । ৬০ বছর পর এ দিন থিয়ান আন মেন মহাচত্বরে এ মহান দিবস উপলক্ষে বিশাল কুচকাওয়াজ ও জনসাধারণের শোভাযাত্রা আয়োজন করা হয় । পেইচিং সময় ১লা অক্টোবর সকাল ১০টায় থিয়ান আন মেন মহাচত্বরে নয়া চীনের ৬০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর প্রতীক ৬০টি তোপ ধ্বনি করা হয় । নয়া চীনের ৬০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে উদযাপনী তত্পরতার কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় । কুচকাওয়াজ পরিদর্শনের জন্য চীনের প্রেসিডেন্ট হু চিন থাও চীনের নিজস্ব তৈরি লাল পাতা মার্কা গাড়ি যোগে থিয়ান আন মেন সিংহদ্বারের সামনের দিক থেকে রওনা হন । কুচকাওয়াজ পরিদর্শন শেষে চীনের গণ মুক্তি ফৌজের গার্ড অব অনার রক্ষায় ৫৬টি সৈন্যদল থিয়ান আন মেন মহাচত্বরের কেন্দ্রস্থলের মধ্যদিয়ে এগিয়ে যায় । এতে নয়া চীনের চতুর্দশ কুচকাওয়াজ শুরু হয় । যারা এ বারের কুচকাওয়াজে অংশ নিয়েছেন , তাদের মধ্যে ৫২ ধরনের সাজ-সরঞ্জাম দেখা গেছে। এ সব সাজ-সরঞ্জামের সব কিছু চীনের নিজস্ব তৈরি । এর মধ্যে ছিল পূর্বসতর্কতাজ্ঞাপক বিমান , নতুন যুদ্ধ যান , চালকবিহীন বিমান এবং উপগ্রহ ও টেলি-যোগাযোগসহ নানা রকম উন্নত মানের সরঞ্জাম । ১লা অক্টোবর থিয়ান আন মেন মহাচত্বরের জন্য যেমন একটি কুচকাওয়াজ ক্ষেত্র, তেমনি তাও একটি উত্সাহব্যঞ্জক জায়গা । ৬৬ মিনিট স্থায়ী কুচকাওয়াজ শেষে গার্ড অব অনার জনসাধারণের শোভযাত্রার সূচনা করেছে ।
লাল পতাকার প্রশংসা নামে সংগীতের সুরের তালে তালে ১৯৪৯জন তরুণ তরুণী চীনের জাতীয় পতাকা উর্ধ্বে তুলে ধরে শোভাযাত্রার প্রথম সারিতে এগুচ্ছে । রঙ্গিন ফিতা ও ফুলে সাজানো ৬০টি গাড়িসহ ১ লাখ জনসাধারণ থিয়ান আন মেন মহাচত্বরের কেন্দ্রস্থলের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যায় । নানা নক্সা তৈরির জন্য মহাচত্বরে ৮০ হাজার কিশোর কিশোরীর পটভূমিতে থিয়ান আন মেন মহাচত্বরসহ মোটা ছাং আন রাস্তা আনন্দের সাগরে মুখরিত হয়ে উঠে । থিয়ান আন মেন মহাচত্বরের কুচকাওয়াজ ও জনসাধরণের শোভাযাত্রা হচ্ছে যেমন নয়া চীনের ৬০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন তেমনি সব চীনের জনগণের জন্য একটি বিশাল উদযাপনী তত্পরতার কার্যক্রম । থিয়ান আন মেন মহাচত্বরে জাতীয় দিবস উপলক্ষে উদযাপনী তত্পরতা দেখা ছিল চীনা নাগরিকদের জন্য নিঃসন্দেহে একটি সুখের ব্যাপার । উদযাপনী অনুষ্ঠান দেখার জন্য থিয়ান আন মেন সিংহদ্বারের এক পাশের মঞ্চে উপস্থিত চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের একজন কর্মকর্তা ওয়েই চিং সেন কুচকাওয়াজে প্রদর্শিত চীনের শক্তিশালী প্রতিরক্ষা শক্তির জন্য গৌরব বোধ করেছেন ।
নয়া চীনের ৫০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে অনুষ্ঠিত উদযাপনী অনুষ্ঠানে তিনিও কুচকাওয়াজ দেখেছেন । তখনকার সময়ের তুলনায় চীনের সেনাবাহিনীর সাজ-সরঞ্জাম ও ব্যবস্থা অনেক উন্নত হয়েছে । এ থেকে বোঝা যায় , চীনের গণ মুক্তি ফৌজ শক্তিশালী , নির্ভরশীল। তারা দেশকে রক্ষা করতে সক্ষম । বিশ্ব শান্তি রক্ষার ব্যাপারেও তারা একটি নির্ভরযোগ্য শক্তি । এ দিন চীনের আরো বেশি জনসাধারণ টেলিভিশন , বেতার ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে থিয়ান আন মেন মহাচত্বরের উদযাপনী অনুষ্ঠান বিষয়ক সরাসরি সম্প্রচারের অনুষ্ঠান দেখেছেন বা শুনেছেন । পেইচিংয়ের একটি বিভাগীয় দোকানে পেইচিং নাগরিক লি তে ইয়্যু কুচকাওয়াজ ও শোভাযাত্রা দেখছেন । তিনি সংবাদদাতাকে বলেন , এবারের উদযাপনী অনুষ্ঠান চমত্কার হয়েছে । এটা বিপুলভাবে চীনের জনগণের উদ্দীপনা উদ্বুদ্ধ করেছে । কুচকাওয়াজে যে সব সাজ-সরঞ্জাম দেখা গেছে , তাতে চীনের সর্বাধুনিক ও হাইটেক প্রযুক্তি তুলে ধরা হয়েছে । এটা বিশ্বের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে । চীনের উদ্দীপনাও অনেক বেড়েছে । মাতৃভূমির সমৃদ্ধির জন্য বিদেশে বসবাসকারী স্বদেশীয় চীনারাও উদ্দীপ্ত হয়ে উঠেছেন । কানাডায় বসবাসকারী চীনা স্বদেশীয় ছেন উয়ান হুয়া নয়া চীনের ৫০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে উদযাপনী তত্পরতায় অংশ নিয়েছিলেন । এবারের উদযাপনী অনুষ্ঠান দেখার জন্য তিনিও আমন্ত্রিত ।
নয়া চীনের ৬০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে উদযাপনী অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার জন্য তিনি খুব আনন্দ ও গৌরব বোধ করেছেন । কারণ গত কয়েক বছরে মাতৃভূমির ব্যাপক উন্নতি হয়েছে । চীন আরো বেশি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন । তিনি বিশ্বাস করেন , বিশ্ব শান্তি ও পরিবেশ সুরক্ষা এবং বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সহযোগিতা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের ব্যাপারেও চীন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে । ১৯৪৯ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত চীন বিশাল সাফল্য অর্জন করেছে । নয়া চীন প্রতিষ্ঠার প্রথম দিকে চীন একটি অনুন্নত কৃষিপ্রধান দেশ ছিল । তখন চীন একটি মোটরগাড়িও তৈরি করতে পারতো না । গত ৬০ বছরে বিকাশের মাধ্যমে চীন বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক গোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছে । চীনের সামরিক বিশেষজ্ঞ তেই স্যু বলেন , ১৯৪৯ সালে যারা কুচকাওয়াজে অংশ নেন , তারা এইমাত্র রণক্ষেত্র থেকে ফিরে এলেন ।
তারা কুচকাওয়াজের কোন আনুষ্ঠানিক নিয়মকানুনও জানতে না । অন্য দিকে তখনকার সব অস্ত্র চীনের নিজের তৈরি ছিল না , চীনের সামরিক কারখানায় শুধু রাইফেল তৈরি করা হতো । কুচকাওয়াজে প্রদর্শিত সব অস্ত্র রণক্ষেত্র থেকে উদ্ধার করা হতো । নয়া চীন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার প্রথম কয়েক বছরে চীনে প্রতি বছর কুচকাওয়াজ আয়োজন করা হয় । গত শতাব্দির ষাটের দশকের পর ৫ বছর বা ১০ বছরে একবার কুচকাওয়া আয়োজন করা হতো । ১৯৭৮ সালে সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের পর চীন যথাক্রমে ১৯৮৪ সাল ও ১৯৯৯ সালে কুচকাওয়াজ আয়োজন করেছে । গত ১০ বছরে চীনের সার্বিক শক্তি দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে । সুতরাং চীনের ৬০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে কুচকাওয়াজ সবার দৃষ্টিকে ব্যাপক আকর্ষণ করেছে । চীনের সামরিক বিজ্ঞান একাডেমির অধ্যাপক মেজর জেনারেল লো ইউয়ান বলেন , এবারে কুচকাওয়াজে চীনের সেনাবাহিনীর আধুনিকীকরণের নির্মাণকাজের ব্যাপক অগ্রগতি পাওয়া গেছে । সাজ-সরঞ্জামের গুণগত মান ও হাইকের দিক থেকে কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণকারী সেনাবাহিনীর সরঞ্জাম আগের চেয়ে অনেক উন্নত হয়েছে । বিশ্বের বেশ কিছু দেশে গুরুত্বপূর্ণ দিবস উপলক্ষে কুচকাওয়াজ আয়োজন করা হয় ।
তিনি বলেন , চীন যে কুচকাওয়াজের আয়োজন করেছে , তার উদ্দেশ্য শক্তি প্রদর্শন নয় । চীনের সেনাবাহিনীর দেশের সার্বভৌমত্ব , নিরাপত্তা ও ভূভাগীয় অখন্ডতা রক্ষা তেমনি বিশ্ব শান্তি রক্ষার একটি শক্তিশালী শক্তি । কুচকাওয়াজ একপ্রকার সামরিক স্বচ্ছতা । তাতে যেমন আন্তর্জাতিক সামরিক শক্তি তেমনি স্বদেশের জনগণের জন্যও স্বচ্ছতা দেখানো যায় ।
বলা যায় , একটি দেশের সামরিক প্রযুক্তির প্রগতির পেছনে এ দেশের সার্বিক শক্তির উন্নতি ফুটে ওঠে । সুতরাং ১লা অক্টোবর থিয়ান আন মেন মহাচত্বরের উদযাপনী তত্পরতার তাত্পর্য আরো সুদূরপ্রসারী । এবারের বিশাল কুচকাওয়াজ ১ বিলিয়নেরও বেশি নাগরিকের উদ্দীপনা উদ্বুদ্ধ করেছে । এতে চীনের জনগণের দেশপ্রেমিক চেতনা আরো বেশি বেড়ে যাবে । (সূত্র: চীন আন্তর্জাতিক বেতার)
বলা যায় , একটি দেশের সামরিক প্রযুক্তির প্রগতির পেছনে এ দেশের সার্বিক শক্তির উন্নতি ফুটে ওঠে । সুতরাং ১লা অক্টোবর থিয়ান আন মেন মহাচত্বরের উদযাপনী তত্পরতার তাত্পর্য আরো সুদূরপ্রসারী । এবারের বিশাল কুচকাওয়াজ ১ বিলিয়নেরও বেশি নাগরিকের উদ্দীপনা উদ্বুদ্ধ করেছে । এতে চীনের জনগণের দেশপ্রেমিক চেতনা আরো বেশি বেড়ে যাবে । (সূত্র: চীন আন্তর্জাতিক বেতার)
0 comments:
Post a Comment